প্রান্তজন প্রতিবেদক,
কোরবানি পশুর বর্জ্য দ্রুত সময়ের মধ্যে অপসারণের জন্য ৭৮৫টি জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। নির্ধারিত এসব জায়গায় প্রয়োজনীয় প্যান্ডেল তৈরিও করে দেওয়া হয়েছে। তবুও এসব স্থানে নগরবাসীকে কোরবানি দিতে দেখা যায়নি। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, এর পেছনে রয়েছে নানা কারণ।
যদিও নগর ভবনের কর্মকর্তারা বলছেন, নির্ধারিত জায়গায় জবাই না হওয়ার জন্য তাদের কোনও গাফিলতি নেই। প্রয়োজনীয় পানি, স্যাভলন, ব্লিচিং পাউডার, বর্জ্য ভরে কন্টেইনারে রাখার জন্য পলি ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়া হয়েছে। তারপরও নির্ধারিত জায়গায় পশু কোরবানি না দেওয়ার জন্য নগরবাসীর অসচেতনতাকেই দায়ী করছে সংস্থাটি। আর নগরবাসী বলছেন, স্থানীয় কাউন্সিলর অফিস থেকে তাদের কাছে এমন কোনও নোটিশ দেওয়া হয়নি। এছাড়া কয়েকদিন থেকে পশু বেঁধে রাখার কারণে অনেক জায়গা নোংরা হয়ে গেছে। জায়গাগুলো অনেকের বাসা থেকে দূরে। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী, অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ির আঙিনায় কোরবানি দিতে চান। আবার অনেকেই বিষয়টি জানেনও না।
দুই সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, দ্রুত বর্জ্য সরানোর জন্য প্রতি বছরের মতো এবারও পশু জবাইয়ের জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ৬০২টি এবং উত্তর সিটি করপোরেশন ১৮৩টি স্থান নির্ধারণ করে দেয়। এর মধ্যে ডিএসসিসি’র থেকে ৩৫০টি স্থানে প্যান্ডেল তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে ডিএনসিসিও প্রায় প্রতিটি স্থানে শামিয়ানা টানিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এসব স্থানে আশানুরূপ কোরবানি হয়নি। অধিকাংশ স্থান ফাঁকা দেখা গেছে। আবার অনেক জায়গায় পশু জবাইয়ের পরিবর্তে দ্বিতীয় বা তৃতীয় দিন কোরবানি দেওয়ার জন্য গোয়াল ঘরের মতো পশুকে বেঁধে রাখা হয়েছে।
নির্ধারিত জায়গায় কোরবানি না দেওয়ার বিষয়ে ডিএসসিসির অতিরিক্তি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম জানিয়েছেন, মানুষ সচেতন না। নগরবাসীকে আমরা অনেকভাবে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। লিফলেট বিতরণ, মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে বার্তা পাঠানো, নগরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়, পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমেও সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এরপরেও নগরবাসী সচেতন হচ্ছেন না।
এদিকে নগরবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা কারণে তারা সিটি করপোরেশন নির্ধারিত এসব স্থানে কোরবানির পশু জবাই করছে না। প্রথমত কোরবানি একটি ধর্মীয় বিষয়। পারিবারিক রীতি অনুযায়ী, কোরবানি যারা দেবেন পশু জবাইয়ের সময় তাদের স্ত্রী সন্তানসহ পরিবার-পরিজন নিয়ে কোরবানি দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করেন। এজন্য নাগরিকদের সবাই নিজস্ব পরিসরে বাসার আঙিনায় কোরবানি দিয়ে থাকেন।
তাছাড়া সিটি করপোরেশন নির্ধারিত স্থানগুলো অনেকের বাসা থেকে দূরে। কোরবানি পশুর মাংস ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আনা-নেওয়ায় কষ্ট সহ্য করতে চান না তারা। আর কোরবানির পশুর তুলনায় নির্ধারিত স্থান ও এর মধ্যে জায়গাও অপ্রতুল।
সাধারণত ঈদের তিন দিন আগে থেকে আগের রাত পর্যন্ত নাগরিকরা কোরবানি দেওয়ার জন্য পশু কিনে থাকেন। কিন্তু পশু কেনার পর রাখার জন্য বাড়ির গাড়ি রাখার গ্যারেজ ছাড়া অন্য কোনও জায়গা তেমন নেই। এজন্য অনেকেই গ্যারেজে রেখে বাসা নোংরা করতে চান না। আর সিটি করপোরেশনের প্যান্ডের দিয়ে তৈরি নির্ধারিত স্থানগুলো খালি পড়ে থাকায় সেখানেই বেঁধে রাখেন। দুই তিনদিন পশু রাখার কারণে ঈদের দিন সকাল পর্যন্ত জায়গাগুলো ময়লা-আবর্জনায় ভরে যায়। ফলে ঈদের সকালে সেখানে আর কোরবানি দেওয়ার পরিবেশ থাকে না।
নাগরিকদের আরও অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত এসব স্থানে কোরবানি দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পানি, স্যাভলন, ব্লিচিং পাউডার, বর্জ্য ভরে ডাস্টবিনে রাখার জন্য পলি ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় উপকরণ দেওয়ার কথা বলা হলেও অনেকেই তা পান না। সেজন্যই তারা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বাসার অঙিনায় কোরবানি দিয়ে বাড়ির পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলেন। তাছাড়া ঈদের মাত্র কয়েকদিন আগেই সিটি করপোরেশন এসব নির্ধারিত স্থানের ঘোষণা দিয়ে থাকে। কিন্তু নাগরিকদের অনেকেই সেসব স্থান কোথায় তা জানেন না।
ঈদের দিন দুপুরে পুরান ঢাকার ধোলাইখাল সংলগ্ন কাউয়ারটেক পশুর হাটের সামনে নির্ধারিত স্থান রেখে রাস্তায় পশু জবাই করতে দেখা গেছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে স্থানীয় বাসিন্দা হাজী আমিরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে পরিবারের সবাইকে নিয়ে কোরবানির পশু জবাই দেওয়া একটা পারিবারির রীতি হয়ে গেছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন যে জায়গা নির্ধারণ করে দিয়েছে সেখানে পরিবারের সবাই যেতে পারে না। তাছাড়া কয়েকদিন ধরে এলাকার মানুষ সেখানে গরু বেঁধে রেখেছে। এখন পশুর মলমূত্রে জায়গাগুলো নোংরা হয়ে গেছে। এগুলো বাসা থেকেও অনেক দূরে।
সকালে দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সেগুনবাগিচা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, শিল্পকলা একাডেমির দক্ষিণ-পূর্ব সংলগ্ন সড়কে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে নির্ধারিত একটি স্থানে পশু জবাইয়ের জন্য ব্যানার লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে লেখা আছে ‘পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে পশু কোরবানির জন্য নির্ধারিত স্থান। সৌজন্যে মেয়র, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন। তত্ত্বাবধানে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, কাউন্সিলর ওয়ার্ড-২০।’ কিন্তু এই স্থানটিতে একটি পশুও কোরবানি দেওয়া হয়নি। পাশের রাস্তায় কোরবানি দিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দা মিনহাজ উদ্দিন।
তিনি বলেন, ‘সবাই বাসার সামনে কোরবানি দিয়েছে। আমিও সেজন্য দিয়েছি। ওখানে পানি, স্যাভলন, ব্লিচিং ফাউডারসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নেই। এখানে বাসার লাইন থেকে পাইপ দিয়ে ময়লা ও রক্ত ধুয়ে দিতে পারবো। তাই বাসার সামনে জবাই করেছি।’
একই অবস্থা দেখা গেছে, সেগুনবাগিচা জামে মসজিদের কাছে কমিউনিটি পুলিশ অফিসের সামনে। এই সড়কটির অন্তত পাঁচটি স্থানে ডিএসসিসি থেকে প্যান্ডেল বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এসব স্থানে কোরবানি না দিয়ে সড়কেই পশু জবাই করেছেন এলাকাবাসী। আর এই প্যান্ডেলগুলোতে দেখা গেছে, পশু বেঁধে রাখা হয়েছে। কোরবানি দেওয়ার এই নির্ধারিত স্থানগুলো অনেকটাই গোয়াল ঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে।
এ নিয়ে কথা হয় স্থানীয় বাসিন্দা হাজী গিয়াসউদ্দিনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আসলে সবাই রাস্তার ওপরে পশু জবাই করছে, সেজন্য আমরাও করেছি। আর সিটি করপোরেশন যে স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছে, সেখানে সবাই গরু বেঁধে রাখার কারণে নোংরা হয়ে গেছে। সে কারণে ওখানে জবাই দেওয়া যাচ্ছে না। আমরা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ময়লা-আবর্জনা নির্ধারিত একটি স্থানে স্তূপ করে রাখবো, যাতে সিটি করপোরেশনের কর্মীরা সহজে নিয়ে যেতে পারেন।’
সকালে একই অবস্থা দেখা গেছে, নগরীর বনশ্রী, মালিবাগ, মগবাজার, ইস্কাটন, সেগুনবাগিচা, পল্টন, নাজিম উদ্দিন রোড, বাংলামোটর, নিকেতন, গুলশান, বনানী, মহাখালী, উত্তরা, সেগুনবাগিচা, গুলিস্তানসহ বিভিন্ন এলাকায়। এসব এলাকায় কোরবানির পশু জবাই দেওয়া হয়- প্রধান সড়ক, অলি-গলি, বাড়ির গ্যারেজ, মার্কেট ও বাড়ির সামনের ফুটপাতে।
কেবল যত্রতত্র কোরবানি দেওয়াতেই থেমে নেই নগরবাসী। রাস্তার ওপরেই গরু-ছাগলের গোবর, রক্ত ও উচ্ছিষ্ট ফেলে রাখা হয়েছে। তবে কেউ কেউ পানি দিয়ে ধুয়ে এসব আবর্জনা ড্রেনে ফেলে দিয়েছেন। ফলে এসব আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়ানোর পাশাপাশি ড্রেন বন্ধ হয়ে বৃষ্টির সময় জলাবদ্ধতা দেখা দিতে পারে। এছাড়া মশা-মাছির উৎপাতসহ বিভিন্ন রোগ-ব্যাধির জীবাণু ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা করছে সিটি করপোরেশন।
জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন বলেন, ‘আমরা প্রায় ৬০২টির মতো স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছি। পর্যাপ্ত ব্যবস্থাপনাও ছিল। কিন্তু এ পর্যন্ত আমরা সেইভাবে নগরবাসীর সাহায্য পাইনি। আমরা তারপরও নাগরিকদের অনুরোধ জানাচ্ছি নির্ধারিত স্থানে পশু জবাই করার জন্য। আমাদের সব ব্যবস্থাপনাই রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের পর্যাপ্ত উপকরণ রয়েছে। যেসব স্থানে ড্রেন বা নর্দমায় বর্জ্য ফেলা হয়েছে সেগুলোও পরিষ্কার করা হবে।’
ডিএসসিসির অতিরিক্তি প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা খন্দকার মিল্লাতুল ইসলাম বলেন, ‘নির্ধারিত কিছু স্থানে কোরবানি হয়েছে। আবার অনেক স্থানে হয়নি। মানুষ সচেতন না। আমাদের সব প্রস্তুতি ছিল। নগরবাসীকে আমরা অনেকভাবে সচেতন করার চেষ্টা করেছি। লিফলেট বিতরণ, মসজিদের ইমামদের মাধ্যমে বার্তা পাঠানো, নগরবাসীর সঙ্গে মতবিনিময়, পত্রিকা ও টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমেও সচেতন করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু এরপরেও নগরবাসী সচেতন হচ্ছে না।’
জানতে চাইলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মেসবাহুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা ১৮৩টি স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছি। নগরবাসীকে আহ্বান জানিয়েছি, তারা যেন নির্ধারিত স্থানে কোরবানি দেন। অনেকেই সচেতন না। আশা করি, আমরা খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে বর্জ্য অপসারণে সক্ষম হবো। আমাদের সে প্রস্তুতি রয়েছে। বর্জ্যের কারণে নগরবাসীকে দুর্গন্ধ পেতে হবে না।’
কেন নির্ধারিত স্থানে পশু কোরবানি হচ্ছে না?

Like
September 3, 2018 at 6:35 amLike!! Thank you for publishing this awesome article.
เพิ่มไลค์เพจ
September 4, 2018 at 6:35 amIt is in reality a great and useful piece of info. Thanks for sharing. 🙂
Like
September 9, 2018 at 2:30 pmLike!! Thank you for publishing this awesome article.
เพิ่มยอดไลค์
September 10, 2018 at 2:31 pmLikely I am likely to save your blog post. 🙂
ปั้มไลค์
October 8, 2018 at 5:52 amI believe you have mentioned some very interesting points, regards for the post. 🙂
ปั้มไลค์
October 10, 2018 at 1:42 pmI believe you have mentioned some very interesting points, regards for the post. 🙂