প্রান্তজন প্রতিবেদক: পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের দুর্গম ও সীমান্তবর্তী অফ-গ্রিড এলাকায় ৪২ হাজার ৫০০ সেট সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এসবের মধ্য ১০০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ৪০ হাজার সেট ‘সোলার হোম সিস্টেম’ এবং পাড়াকেন্দ্র/ছাত্রাবাস/কমিউনিটি সেন্টারে ৩২০ ওয়াট পিক ক্ষমতাসম্পন্ন ২ হাজার ৫০০ সেট ‘সোলার কমিউনিটি সিস্টেম’ সরবরাহ ও স্থাপন করা হবে। এজন্য মোট ব্যয় হবে ২০৪ কোটি ৩৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট।
‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (২য় পর্যায়)’ শীর্ষক এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড।
২০২১ সালের মধ্যে সব ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন এবং তিন পার্বত্য জেলার দুর্গম ও সীমান্তবর্তী যেসব এলাকায় আগামী ২০-২৫ বছরে জাতীয় গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব নয়, সেসব এলাকায় বিদ্যুৎ সুবিধা দেওয়ার লক্ষ্যে প্রকল্পটি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রকল্পটি ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য একনেক সভায় অনুমোদিত হয়েছে।
উল্লেখ্য, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক ২০১৫ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন মেয়াদে বাস্তবায়িত ‘পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত এলাকায় সোলার প্যানেল স্থাপনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ সরবরাহ (প্রথম পর্যায়)’ শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ১০ হাজার ৮৯০ সেট সোলার হোম সিস্টেম ও ২ হাজার ৮১৪ সেট সোলার কমিউনিটি সিস্টেম স্থাপন কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে (ডিপিএম) বাস্তবায়ন করা হয়। প্রধানমন্ত্রী গত ২৮ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ প্রকল্পের আওতায় বিদ্যুতায়ন কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য অঞ্চলের দুর্গম ও সীমান্তবর্তী অবশিষ্ট অফ-গ্রিড এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীকে সোলার প্যানেল সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দেন।
অনুমোদিত ডিপিপিতে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতি (ডিপিএম) অনুসরণ করে ৪২ হাজার ৫০০ সেট সোলার প্যানেল সরবরাহ ও স্থাপনের জন্য ২০৪ কোটি ৫০ লাখ টাকার সংস্থান আছে।
ক্রয় ও অন্যান্য বিষয় পর্যালোচনার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির প্রথম সভায় পিপিআর-২০০৮ এর ৭৫(৩) বিধি অনুযায়ী, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দুর্গমতা, সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও সীমান্তবর্তী এলাকা বিবেচনায় এ অঞ্চলে কাজ করার সক্ষমতা এবং অভিজ্ঞতার আলোকে বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরি লিমিটেড, সেনা কল্যাণ সংস্থা, বাংলাদেশ ডিজেল প্ল্যান্ট লিমিটেড ও বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের কাছে আগ্রহ ব্যক্তকরণ ও মূল্যসম্বলিত প্রস্তাব দাখিল করার অনুরোধপত্র পাঠানো হয়। এর মধ্যে শুধু বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট প্রস্তাব দাখিল করে।
উল্লেখ্য, বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের দাখিল করা অভিজ্ঞতার সনদপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানটি পার্বত্য চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য প্রত্যন্ত এলাকার সীমান্ত চৌকিতে এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয়ে নবায়নযোগ্য শক্তিনির্ভর বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এছাড়া, পঞ্চগড়ে ১০০ মেগাওয়াটের সৌর বিদ্যুৎ স্থাপন কার্যক্রম চলমান আছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পিপিআর-২০০৮ এর ৭৫(৩) বিধি অনুযায়ী নেগোশিয়েনের জন্য চিঠি পাঠানো হয়। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনা করে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বিজিবি ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের নাম সুপারিশ করে।
আগামী বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি ক্রয় প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে উপস্থাপন করা হতে পারে বলে পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।